তোমার অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে
তার বর্ণনা দিয়ে প্রবাসী বন্ধুর কাছে একটি পত্র লেখ।
অথবা,
সাম্প্রতিক বন্যায় তোমার এলাকার যে
ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে তার বর্ণনা দিয়ে কোনো এক প্রবাসী বন্ধুর কাছে একটি পত্র লেখ।
কলারোয়া, সাতক্ষীরা
১৫ মার্চ, ২০২২
প্রিয় “ম”,
আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। তোমার পত্রটি
দিন দশেক আগে আমার হাতে পৌছেছে। উত্তর দিতে বিলম্ব হলো। কারণ আকস্মিক বন্যায় আমাদের
এলাকা ভীষণভাবে প্লাবিত হওয়ায় আমরা প্রায় ভাসমান জীবনযাপনে বাধ্য হই। তোমার পত্র যখন
হাতে পাই তখন আমাদের ঘরে হাঁটু পানি। আমরা আশ্রয় নিয়েছি বাঁশের মাচায়। কীভাবে তোমার
পত্রের উত্তর লিখি বলো?
তোমাকে আমাদের এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে
আগেই জানিয়েছিলাম। যমুনা নদীর তীরবর্তী একটি নিচু ও সমতল জনপদে আমাদের বাস। উজান থেকে
নেমে আসা পানির তোড়ে যমুনার বুক উছলে প্রায় প্রতিবছর কমবেশি আমাদের এলাকা প্লাবিত করে।
১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় আমাদের এলাকাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। এ বছরের
আগস্ট মাসেও সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
হওয়া এলাকাগুলের মধ্যে আমাদের এলাকা অন্যতম। সরকার সারা দেশের বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতির
পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনো প্রকাশ করে নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এ বন্যায় অন্তত
৪,২০০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক পরিসংখ্যানে আরও জানা গেছে, এ বন্যায়
দেশে অন্তত ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এবার আমাদের এলাকার বন্যার চিত্রটি তোমার কাছে
সংক্ষেপে তুলে ধরতে চাই। আমাদের থানার ১১ টি ইউনিয়নের সবগুলোই বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছিল।
শতকরা ৫ ভাগ ভূমিও শুকনো ছিলো না। অধিকাংশ বাড়িতে হাঁটু বা কোমর সমান পানি উঠেছিল।
নিচু এলাকার মানুষ ঘরের চাল, নৌকা বা কলাগাছের ভেলার উপর আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল।
বন্যার পানির তোড়ে অসংখ্য বিষধর সাপ পাহাড় থেকে ভেসে এসেছিল। কোথাও কোথাও মানুষ ও সাপ
একই সাথে বসবাস করেছে। আমাদের এলাকায় সাপের কামড়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এলাকার স্কুল
কলেজ বন্ধ, সেখানে বন্যার্তরা আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের বাড়ি থেকে বন্যার পানি এখন অবশ্য
নেমে গেছে। তবে পুরো এলাকার জনজীবন স্বাভাবিক হতে আরো কয়েক দিনে লেগে যাবে।
বন্যার চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি ও দেশের সামগ্রিক
অবস্থা সম্পর্কে পরবর্তীতে বিস্তারিত লিখবো। এ বন্যার ভয়াবহতার চিত্র তুমি বিভিন্ন
পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের প্রতিবেদনেও দেখতে পাবে। আজ তাহলে এ পর্যন্তই।
ইতি
তোমার প্রিয় বন্ধু
“এ”