প্রিয় শিক্ষার্থীবন্ধুরা, আশা করি ভালো আছো। আজকের এই ব্লগে আমি তোমাদের মাঝে তৃতীয় শ্রেণির “প্রাথমিক বিজ্ঞান” বইয়ের পঞ্চম পাঠ ‘মাটি’ এর হ্যান্ডনোট শেয়ার করবো। আশা করি তোমাদের ভালো লাগবে এবং এই হ্যান্ডনোট টি ঠিকমতো আয়ত্ত্ব করতে পারলে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ্। তাহলে শুরু করা যাক –
এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় –
মাটি আমাদের খুবই প্রয়োজনীয় বস্তু। মাটিতে
জন্মানো উদ্ভিদ থেকে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য আসে। মাটি কিছু জীব ও জড় পদর্থের মিশ্রণ। এর উপাদানগুলো হলো – বালু কণা, জৈব পদার্থ,
পানি, বায়ু, খনিজ লবণ ও ব্যাকটেরিয়ে। মাটি তিন প্রকার – বেলে মাটি, দোআঁশ মাটি ও এঁটেল মাটি। বেলে মাটির বেশিরভাগই বালি। দোআঁশ মাটির অর্ধেক বালি অর্ধেক কাদা। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা দোআঁশ মাটি দিয়ে গঠিত। এঁটেল মাটিতে কাদার পরিমাণ বেশি এবং কণাগুলো মিহি।
পাঠ্যবইয়ে দেওয়া প্রশ্ন ও কাজগুলোর সমাধান –
প্রশ্নঃ মাটি কী দিয়ে তৈরি? (পাঠ্যবইয়ের
পৃষ্ঠা নং - ৩০)
উত্তরঃ মাটি হচ্ছে পৃথিবীর উপরিভাগের নরম আবরণ। মাটির বিভিন্ন উপাদানগুলো হলো নুড়ি পাথর, বালু, পলি, কাদা, পানি, বায়ু ইত্যাদি। এছাড়াও উদ্ভিদ এবং প্রাণির মৃতদেহের পচা অংশেও মাটিতে
থাকে।
কাজঃ মাটির উপদান। (পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা নং - ৩০)
সমাধানঃ
পাঠ্যবইয়ে দেখানো গ্লাসের মত আমার খাতায় একটি গ্লাসের চিত্র আঁকি।
- শ্রেণিকক্ষের বাইরে গিয়ে কিছু মাটি সংগ্রহ করলাম।
- একটি কাচের গ্লাসে সামান্য মাটি রেখে তাতে পানি ঢেলে নিলাম।
- এরপর দেখলাম গ্লাস থেকে বুদবুদ বের হবে।
- ভালো করে কাঠি দিয়ে নেড়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম।
- গ্লাসের ভেতর মাটির বিভিন্ন উপাদান দেখতে পেলাম।
প্রশ্নঃ
বিভিন্ন ধরনের মাটির মধ্যে পার্থক্য কী? (পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা নং - ৩১)
উত্তরঃ মাটি তিন ধরনের। নিচ তিন
ধরনের মাটির মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করা হলো -
বৈশিষ্ট্য |
এঁটেল মাটি |
বেলে মাটি |
দোআঁশ মাটি |
মাটির রং |
এ মাটি লালচে রঙের
হয়। |
এ মাটি হালকা বাদামি
থেকে হালকা ধূসর রঙের হয়। |
এ মাটির রং কালো
হয়। |
পানি ধারণ ক্ষমতা |
এ মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। |
বেলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা সবচেয়ে
কম। |
এ মাটিতে বালু এবং কাদা থাকার কারণে
পানি এবং মাটির অন্যান্য উপাদান ধরে রাখে কিন্তু পানি জমে থাকে না। |
দানার আকার |
এঁটেল মাটির কণা
সবচেয়ে ছোট। |
এ মাটির কণাগুলো
সবচেয়ে বড়। |
দোআঁশ মাটির কণাগুলো
বিভিন্ন আকারের হয়। |
কাজঃ বিভিন্ন ধরনের মাটির বৈশিষ্ট্য। (পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা নং -
৩১)
সমাধানঃ পাঠ্যবইয়ে দেখানো ছকের মতো আমার খাতায় একটি ছল আঁকলাম। এরপর একটা খবরের কাগজ বিছিয়ে তার উপর তিন ধরনের
মাটি রাখলাম এবং এদের বৈশিষ্ট্য নিচের ছক লিখলাম –
বৈশিষ্ট্য |
নমুনা-১ |
নমুনা-২ |
নমুনা-৩ |
মাটির রং |
লালচে রঙের |
হালকা বাদামি থেকে
হালকা ধূসর রঙের। |
রং কালো। |
হাতে ধরলে অনুভূতি |
ভেজা মাটি এবং আঠালো |
শুকনা দানাময়। |
নরম এবং শুকনা। |
উপাদানসমূহের আকার |
ছোট কণা বিশিষ্ট। |
নমুনা-১ ও নমুনা-৩ এর কণার চেয়ে কণার চেয়ে বড়। |
বিভিন্ন আকারের
কণা। |
অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য |
পানি ধারণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। |
পানি ধারণ ক্ষমতা সবচেয়ে কম। |
পানি ও অন্যান্য উপাদান ধরে রাখে কিন্ত
পানি জমে থাকে না। |
সবশেষে আমার কাজ নিয়ে আমার সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করলাম।
প্রশ্নঃ কোন মাটি কোন ফসলের জন্য উপযোগী?
উত্তরঃ কোন মাটি কোন ফসলের জন্য উপযোগী তা নিচে দেখানো হলো –
মাটি |
উপযোগী ফসল |
এঁটেল |
শিম, কাঁঠাল |
বেলে |
তরমুজ, চিনাবাদাম, ফুটি, খিরা, শসা |
দোআঁশ |
ধান, গম, ভুট্রা, যব,
পাট, আখ |
কাজঃ মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা। (পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা নং - ৩৩)
সমাধানঃ
সতর্কতাঃ বোতলের ধারগুলো লেগে তোমার হাত যেন না কাটে।
- এঁটেল মাটি, বেলে মাটি, দোআঁশ মাটি সংগ্রহ করি।
- পাঠ্যবইয়ের দেখানো ছকের মতো একটি ছক তৈরি করি।
- প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে মাঝ বরাবর কেটে ফানেল বানাই।
- চিত্রের ন্যায় তিন ধরনের মাটিতে সমপরিমাণ পানি ফানেলে ঢালি।
- এঁটেল মাটির পানি সহজে বের হয় না। বেলে মাটির পানি খুব তাড়াতাড়ি বের হয় এবং দোআঁশ মাটির পানি মাঝামাঝি সময়ে বের হয়।
আমি যা দেখেছি তা ছকে লিপিবদ্ধ করি।
বৈশিষ্ট্য |
এঁটেল মাটি |
বেলে মাটি |
দোআঁশ মাটি |
কত তাড়াতাড়ি পানি
পাত্র পড়ছে |
সহজে না |
খুব তাড়াতাড়ি |
সহজে |
পাত্রে জমা পানির
পরিমাণ |
খুব কম |
সবচেয়ে বেশি |
বেলে মাটির তুলনায় কম। |
অবশেষে আমার কাজ নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করলাম।
চিন্তা কর এবং আলোচনা কর – কোন মাটি বেশি পরিমাণ পানি ধরে রাখতে পারে? (পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা নং - ৩৩)
উত্তরঃ এঁটেল মাটি বেশি পরিমাণ পানি ধরে রাখতে পারে। বেলে মাটির কণার ফাঁক দিয়ে পানি সহজেই নিচে চলে
যায়। এই মাটির পানি ধারণ
ক্ষমতা সবচেয়ে কম। দোআঁশ মাটি পানি ধরে
রাখতে পারে, তবে এঁটেল মাটির চেয়ে
কম।
আমি কেন এমনটি মনে করি?
উত্তরঃ আমার এমনটি মনে করার কারণ –
- এঁটেল মাটির কণাগুলো সবচেয়ে ছোট এবং ঘন। তাই এ মাটি থেকে পানি সহজে বের হতে পারে না।
- বেলে মাটির কণাগুলো বড়। তাই কণার ফাঁক দিয়ে পানি তাড়াতাড়ি নিচে চলে যায়।
- দোআঁশ মাটিতে বালু, কাদা ও হিউমাস থাকে। বালু ও কাদ থাকার কারণে এ মাটি পানি ধরে রাখতে পারে কিন্তু পানি জমে থাকে না।
“মাটি”
এর অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর –
১. শূন্যস্থান পূরণ কর –
১. মাটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়;
এঁটেল মাটি, বেলে মাটি এবং দোআঁশ মাটি।
২. যে মাটির কণা সবচেয়ে বড় তা হলো
বেলে মাটি।
৩. যে মাটিতে বালু, কাদা এবং হিউমাস থাকে তাকে দোআঁশ মাটি বলে।
২. সঠিক উত্তরটিতে টিক (✔) চিহ্ন দাও –
১. শিম এবং কাঁঠাল কোন মাটিতে ভালো
জন্মায়?
✔ এঁটেল মাটি।
২. তরমুজ ও চিনাবাদাম কোন মাটিতে ভালো
জন্মায়?
✔ বেলে মাটি।
৩. নিচের প্রশ্নগুলো উত্তর দাও
–
প্রশ্ন-১। দোআঁশ মাটিতে ফসল ভালো জন্মায় কেন?
উত্তরঃ বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকা দোআঁশ মাটি দিয়ে গঠিত। দোআঁশ মাটিতে বালু, কাদা এবং হিউমাস মিশে থাকে। বালু এবং কাদা থাকার কারণে এ মাটি পানি এবং মাটির
অন্যান্য উপাদান বেশি ধরে রাখতে পারে কিন্তু পানি জমে থাকে না। তাই দোআঁশ মাটিতে ফসল ভালো জন্মায়।
প্রশ্ন-২। বেলে মাটির বৈশিষ্ট্যগুলো কী?
উত্তরঃ বেলে মাটি সাধারণত হালকা বাদামি থেকে হালকা ধুসর রঙের হয়। এ মাটির বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে দেওয়া হলো –
- বেলে মাটির কণাগুলো বেশ বড়।
- এ মাটির পানি ধারণক্ষমতা কম।
- এ মাটির কণার ফাঁক বেশি হওয়ায় পানির সাথে মাটির প্রয়োজনীয় উপাদান বের হয়ে যায়।
প্রশ্ন-২। দোআঁশ মাটি এবং এঁটেল মাটির মধ্যে দুইটি পার্থক্য
লেখ?
উত্তরঃ দোআঁশ মাটি এবং এঁটেল মাটির মধ্যে দুইটি পার্থক্য নিচে উল্লেখ করা হলো –
দোআঁশ মাটি |
এঁটেল মাটি |
১. দোআঁশ মাটির রং কালো। |
১. এঁটেল মাটি লালচে রঙের। |
১. এ মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা কম। |
২. এ মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। |
৪. বামপাশের শব্দের সঙ্গে ডানপাশের
শব্দের মিল কর –
- এঁটেল মাটি কাঁঠাল।
- বেলে মাটি তরমুজ।
- দোআঁশ মাটি ধান।
- উদ্ভিদ ও প্রাণীর মরা-পচা অংশ হিউমাস।
তথ্যসূত্রঃ
- বইঃ প্রাথমিক বিজ্ঞান (তৃতীয় শ্রেণি)
- পাঠঃ মাটি (অধ্যায় - ৫)
- পৃষ্ঠা – ৩০ থেকে ৩৫
আশা করি তোমরা পুরো পোষ্টটি যত্ন সহকারে পড়েছ এবং উপকৃত হয়েছ। আর এটাই আমার সার্থকতা। পোষ্টটি যদি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার এবং কমেন্ট করতে ভুলবে না। আজ আর নয়, কথা হবে অন্য কোন দিন এবং নতুন কোন পাঠে। ঐ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকো এবং সুস্থ থাকো। আল্লাহ হাফেয।