প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনুস শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পাওয়ায়
তোমার অনুভূতি জানিয়ে প্রবাসী বন্ধুকে একটি পত্র লেখ।অথবা, ড. মুহাম্মদ ইউনুস নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তিতে তোমার অনুভূতি
জানিয়ে প্রবাসী বন্ধুকে একটি পত্র লেখ।
চাঁদপুর
১২ মার্চ, ২০২২
প্রিয় সৈকত,
আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিবে। আশা করি কুশলেই আছো। কয়েকদিন আগে তোমার আকটি
পত্র পেয়েছি। সময়মতো তার উত্তর দিতে পারি নি বলে দুঃখিত।
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় তুমি নিশ্চয়ই আনন্দিত হয়েছ। বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে
তার এ গৌরব অর্জনে আমার মনে কি যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো
না। আনন্দে মাতোয়ারা আজ বাংলাদেশের সকল নাগরিক। সারা বিশ্বের পত্রপত্রিকা, রেডিও, টিভি
ও স্যাটেলাইটে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির খবর প্রচার হওয়ার ক্ষুদ্র
আয়তনের বাংলাদেশ বিশ্বে হয়ে উঠেছে সুপরিচিত। তার অভূতপূর্ব সাফল্যে আজ বাংলাদেশের সকল
শ্রেণীর মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার, ব্যানার নিয়ে
আনন্দ মিছিল করা হয়েছে। বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশনে তার নোবেল পুরস্কার
প্রাপ্তির খবর ফলাও করে ছাপা হয়েছে। সারাদেশ যেন আনন্দের বন্যার ভেসে যাচ্ছে যা তুমি
স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করবে না। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার হিসেবে খ্যাত নোবেল পুরস্কার
পাওয়া পরম গৌরবের বিষয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো কৃতী
সন্তান নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে নি। বাঙালি হিসেবে ইতিপূর্বে
নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন দু’জন কীর্তিমান ব্যক্তি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অর্থনীতিবিদ
অমর্ত্য সেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে সাহিত্যে এশীয়দের মধ্যে প্রথম নোবেল
পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে বাঙালি অমর্ত্য সেনও অর্থনীতিতে সে গৌরব অর্জন করেন।
কিন্তু এই বছর শান্তিতে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নোবেল বিজয়ের গৌরব বাংলাদেশী হিসেবে দেরিতে
হলেও তার এ অর্জন আমাদের জন্য একটি বিরল ঘটনা। ২০০৬ সালের ১০ ডিসেম্বর নরওয়ের রাজধানী
অসলোতে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে তার হাতে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ও গর্বিত পুরস্কার তুলে
দেওয়া হয়। প্রথম বাংলাদেশীর নোবেল পুরস্কার গ্রহণ সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ
করেছে। এটা ভাবতে গর্বে আমার বুক ভরে উঠে। আমি মনে করি, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের অবদানের
যথার্থ মূল্যায়ন করেই তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। তার উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রঋণ
কর্মসূচি (Microcredit Programme) কে কাজে লাগিয়ে তার প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক ভূমিহীন
ও অসহায় মানুষদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখায় তাকে এবং গ্রামীণ ব্যাংককে সম্মিলিতভাবে
নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। গ্রামের নিন্ম আয়ের লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষ
আজ গ্রামীণ ব্যাংকের সুবিধা ভোগ করছে। গ্রামীণ মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অনেক
দেশেই ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রবর্তিত গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। তার প্রতিষ্ঠিত
গ্রামীণ ব্যাংক দেশের অসহায় ও ভূমিহীন মানুষদের জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করে তাদের স্বাবলম্বী
হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। তারা এ ঋণ পেয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে এবং দেশের অর্থনৈতিক
উন্নয়নে যথেষ্ঠ অবদান রাখছে। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির ক্ষেত্র
দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটা অসহায় ও ভূমিহীন মানুষের জন্য আলোকবর্তিক হিসেবে কাজ
করছে।
প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনুস
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় তোমার অনুভূতি জানার অপেক্ষায় রইলাম। তোমার আব্বা-আম্মাকে
আমার সশ্রদ্ধ সালাম জানিয়ে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
ইতি
তোমার প্রীতিমুগ্ধ
হাবিব